Friday, August 8, 2025

বিক্রয় পেশায় প্রবেশকালীন বাস্তবতা: সমস্যা, কারণ ও সমাধান

 *বিক্রয় পেশায় প্রবেশ কালীন বাস্তবতা:*


❓ প্রশ্ন ১: কেন বলা হয় যে, *“যার নেই কোনো কাজ, সে করে বিক্রয় পেশার সহজ জব”?*


উত্তর:


প্রবেশদ্বার খোলা: শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই পেশায় ঢোকা যায়।


বিকল্পহীনতার সুযোগ: কেউ যখন সরকারি বা ভালো বেসরকারি চাকরি পায় না, তখন সেলস পেশা শেষ ভরসা হয়।


চাহিদা বেশি, যাচাই কম: প্রতিটি FMCG কোম্পানির অনেক সেলস ফোর্স লাগে, তাই দ্রুত লোক নেওয়া হয় যাচাই ছাড়া।


স্থানীয় সুপারিশ নির্ভরতা: লোকাল সুপারভাইজার বা হোলসেল ডিলারদের সুপারিশেই অনেকেই নিয়োগ পেয়ে যায়।


❓ প্রশ্ন ২: কেন বলা হয় *“যার নেই কোনো গতি, সে পায় বিক্রয় পেশার হাতে খড়ি”?*


উত্তর:


ব্যর্থদের ঠিকানা বানানো হয়েছে: যারা অন্য পেশায় ব্যর্থ, তারা সেলস পেশায় ঢুকে পড়ে।


দূরদর্শিতা ছাড়া পদচারণা: অনেকেই সেলসকে একটি “স্টেপিং স্টোন” মনে করে, সিরিয়াসলি নেন না।


পেশাগত সম্মানহীনতা: এই পেশাকে চাকরির বাজারে অনেকেই ‘লাস্ট অপশন’ হিসেবে দেখে।


❓ প্রশ্ন ৩: কেন স্থানীয়ভাবে যারা নিয়োগে সহায়তা করেন, তারা নিরুপায় হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন?


উত্তর:


কম বেতন, উচ্চ চাহিদা: কোম্পানিগুলো ৮-১০ হাজার টাকায় সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ খুঁজে, যা মেধাবীদের কাছে অবমাননাকর।


দায়বদ্ধতা ছাড়া নিয়োগ: “লোক লাগবে, কে যেন থাকুক”—এই চিন্তাভাবনায় লোক নেওয়া হয়।


দুর্বল জায়গাগুলোর লোক কম: প্রত্যন্ত বা গ্রামীণ এলাকায় মেধাবী ও শিক্ষিত লোক পাওয়া কঠিন, তাই স্থানীয়ভাবে যারাই আসে, তাদেরই রাখা হয়।



❓ প্রশ্ন ৪: কেন এই পেশায় সবচেয়ে বেশি দূর্বল, অদক্ষ ও হিংসাপরায়ণ লোক ঢুকে পড়ে?


উত্তর:


মূল্যায়নহীনতা: কেবল ‘টার্গেট পূরণ করতে পারলেই চলবে’—এই মানসিকতা নিয়োগের মান কমিয়ে দেয়।


নৈতিকতা যাচাই হয় না: কেউ কেমন মানুষ—তা দেখা হয় না, শুধু ‘লোক চাই’ দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে।


শিক্ষা ও ট্রেনিংয়ের অভাব: অর্ধ-শিক্ষিত বা ট্রেনিং ছাড়া লোকজন সহজেই ঢুকে পড়ে, যাদের মধ্যে পেশাগত ভদ্রতা গড়ে ওঠে না।


অহংকার ও হিংসা বাড়ে: যোগ্যতা না থাকলেও পজিশনের কারণে নিজের গুরুত্ব মনে করে এবং অন্যদের সহ্য করতে না পেরে বিদ্বেষ পোষণ করে।


❓ প্রশ্ন ৫: এই ধরণের নিয়োগ থেকে কী কী সমস্যা তৈরি হয়?


উত্তর:


1. পেশার মান নষ্ট হয় – সেলস জবকে অনেকে “লোক দেখানো কাজ” হিসেবে দেখে।



2. সহকর্মীদের মধ্যে শত্রুতা বাড়ে – হিংসুক মানসিকতা থেকে টিম স্পিরিট নষ্ট হয়।



3. কোম্পানির ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় – কাস্টমারের কাছে সঠিকভাবে পণ্য বা অফার উপস্থাপন করতে পারে না।



4. শিক্ষিত, যোগ্য লোক এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় – ফলে এক সময় দক্ষতা সংকট তৈরি হয়।


❓ প্রশ্ন ৬: তাহলে এই পেশায় মানসন্মত নিয়োগ ও সংস্কার কিভাবে আনা সম্ভব?


উত্তর: ✅ ১. শিক্ষাগত ও আচরণগত যাচাই বাধ্যতামূলক করা উচিত

✅ ২. বেতন কাঠামো বাড়িয়ে যোগ্য মানুষ আকৃষ্ট করা উচিত

✅ ৩. লোকাল সুপারিশ নির্ভরতা কমিয়ে HR ডিপার্টমেন্টকে শক্তিশালী করা

✅ ৪. নিয়োগের আগে ন্যূনতম ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করা

✅ ৫. পারফরম্যান্স মূল্যায়নের সাথে আচরণ ও মূল্যবোধ যুক্ত করা (Behavioural KPI).


❓ প্রশ্ন ৭: এই পেশার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে বদলানো সম্ভব?


উত্তর:


সফল সেলসম্যানদের উদাহরণ সামনে আনা


কোম্পানি থেকে কর্মীদের সামাজিক মর্যাদা দেওয়া (অ্যাওয়ার্ড, প্রশংসা)


সেলস পেশাকে প্রফেশনাল ক্যারিয়ার হিসেবে তুলে ধরা—'লাস্ট অপশন' নয়


শিক্ষিত, তরুণদের জন্য ট্রেনিং ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং চালু করা।


✅ উপসংহার:


FMCG সেলস পেশা বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। কিন্তু যখন এই পেশায় "যার কিছু নেই, সে এলোমেলোভাবে ঢুকে পড়ে", তখন পেশাটির মর্যাদা নষ্ট হয়, টিম সংস্কৃতি ভেঙে পড়ে, এবং সারা সেক্টর ক্ষতির মুখে পড়ে।


এখন সময় হয়েছে, পেশাটিকে যোগ্য, মানবিক, শিক্ষিত ও পেশাদার লোকদের জন্য উন্মুক্ত করে তোলার। নয়তো এই পেশা হয়ে উঠবে একটি “ব্যাকআপ অপশন”—যেখানে আশা থাকবে না, সম্মানও না।

No comments:

Post a Comment