অবন্তীঃ যেদিন প্রথম বউ সেজে তোমাদের বাসায় এসেছিলাম তখনি আমি ওয়াদা করেছি তোমার ভাইকে ছাড়া জীবনে আর কারো দিকে তাকাবোও না।
আমার থেকে তোমার ভাই আমাকে বেশি ভালোবাসতো, কতটা বাসতো সেটা হয়তো কল্পনাও করা যাবে না।
আমিঃ........ (এখনো চুপ)
অবন্তীঃ তুমি হয়তো আমাকে প্রশ্ন করতে পারো, আমি যদি অন্য কাওকে স্বামী হিসেবে না মানতে পারি তাহলে তোমাকে কেন বিয়ে করলাম?
হ্যা এটার উত্তরও দিয়ে দিচ্ছি। তোমার সাথে বিয়ে না হলে অন্য কোথাও ঠিকই বাবা মা আমার বিয়ে দিয়ে দিতো। কিন্তু আমি এইখানে আব্বু আম্মুর আর তোমার কাছ থেকে যে ভালোবাসা, আদরযত্ন পেয়েছি অন্য কোথাও সেটা নাও পেতে পারি।
আমার মনের অবস্থাটা তোমরা একটু হলেও বুঝবে বাট অন্যরা বুঝবে না।
আমিঃ........
অবন্তীঃ জানো জুয়েল আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাগা, সুখ ঠিকই আসলো কিন্তু কপালে লেখা ছিলো না।
আমিঃ.........
অবন্তীঃ তুমি আমাকে মাফ করে দিও। তোমার সুন্দর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম, জানো আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা মেয়ে দেখ তারপর তোমার সাথে বিয়ে দিবো।
আমরা জ্যা হিসেবে নয় বোন হিসেবে থাকতাম। একবার চিন্তা করো কতো সুন্দর হতো আমাদের ফ্যামিলিটা।
আমিঃ.......(এখনো চুপ)
অবন্তীঃ তুমি প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছি না।
আমিঃ অনেক রাত হইছে, ঘুমিয়ে পড়ুন।
এটুকু বলেই বারান্দায় চলে গেলাম। এমন কিছু হবে আমি জীবনেও কল্পনা করিনি।
আমি ভাবছি অন্য কোথাও অবন্তীর বিয়ে হয়ে গেলে সে সুখে থাকবে না, সব কিছু মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।
আমার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো অবন্তীর কোনো আফসোস থাকতো না। কিন্তু কি ভাবলাম আর কি হয়ে গেলো? আসলে সব কিছু সবার কপালে থাকে না।
আমার কপাল যে এতো খারাপ হবে আমি কখনো ভাবিনি। কতো সুখেই না ছিলাম আমি, কিন্তু আজ? সুখের চিহ্নও নাই,,, মনে মনে বাবার উপর রাগ হচ্ছে।
উনার আবেগ রাখতে গিয়ে আমার জীবনটাই শেষ, ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তেছে।
আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভাইয়ার কবরের কাছে যাবো। ঘড়ি দেখলাম ১২.০০ টা বাজে, আমি কাওকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।
বাইরে খুব সুন্দর চাঁদের আলো, একা একা হাটতেছি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম....
কবরের বেড়াটা ধরে তাকিয়ে রইলাম কবরের দিকে, ভাইয়া আর আমার স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো।
নিজেই নিজেই বলতে শুরু করলাম,,,
" ভাইয়া কেমন আছিস? তোর কি সময় হবে একটু কথা বলতাম। জানিস তুই যে আমার মাথার উপর ছায়ার মতো ছিলি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
যখন যেটা চেয়েছি সেটাই তুই আমাকে দিয়েছিস, কিন্তু দেখ আমি কি হতভাগা, তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
তুই যখন ফ্যামিলি চালাইছিস রাজার মতো চলেছি আমরা, অথচ দেখ আমি কিভাবে চালাচ্ছি একবেলা খেলে পরের বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।
বাবা মাকে আমি সুখে রাখতে পারছি না। জানিস ভাই এখনো আমি কোনো জিনিষ কিনলে তোর জন্যও কিনে রাখি। আমি যেখানেই যাই না কেন সব সময় যেন মনে হয় তুই আমার পাশেই আছিস।
ভাই তোর মনে আছে তুই যে দিন বাইক কিনেছিলি চাবিটা আমার হাতে দিয়ে দিলি আর বললি বাইকটা আজ থেকে তোর, তুই আমার জন্য অনেক sacrifice করেছিস, কিন্তু দেখ আমি কতো বড় হারামি! তোর জন্য তো কখনো sacrifice করিনি বরং তোর বউটাকে নিজের বউ করে নিয়েছি।
ভাই বিশ্বাস কর, আমি অনন্তীকে বউ হিসেবে কল্পনাও করিনি। তোর যাতে মনে কষ্ট না যায় সেজন্য আমি কখনো অবন্তীর দিকে খারাপ নজরেও তাকাই নি।
তুই সব সময় আমাকে বলতি অবন্তীকে দেখে রাখতে কিন্তু দেখ আমি কতো বড় বেইমান দেখে রাখার নাম করে আমি নিজেই ওরে বিয়ে করে ফেলেছি।
ভাই, এই ভাই, আর একবার আমাদের মাঝে আয়। আমি যে আর পারছি না। মা বাবাকেও কিছু বুঝতে দিতেছি না কারণ আমি যদি ভেঙ্গে পড়
...আবারও হাটতে হাটতে বাসায় গেলাম, রাত প্রায় ১১ টা বাজে। আমি বাসায় গিয়ে বাবাকে ডাকলাম, তারপর, আমার ডাক শুনে আব্বু আম্মু আর অবন্তী আসলো।
বাবাঃ কিরে এতো দেরি হলো যে?
আমিঃ কাজের চাপ ছিলো। এই নাও (টাকা গুলো দিলাম)
বাবাঃ কি এখানে?
আমিঃ তোমার মেয়ের পরীক্ষার খরচ। ৬ হাজার আছে,,,
বাবা টাকা গুলো হাতে নিলো, অবন্তীকে দিয়ে দিলো। তারপর অবন্তী বললো....
অবন্তীঃ আব্বু একটা কথা বলতাম।
বাবাঃ হুম মা বল।
অবন্তীঃ জুয়েলের একা ইনকামে দিয়ে তো আর সব কিছু করা সম্ভব না। তাই বলছিলাম কি আমিও একটা চাকরি করি। তাহলে মোটামুটি আমাদের পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আসবে।
আমিঃ এই পরিবারে আর কারো ইনকাম করার দরকার নেই। আমি এখনো মরিনি। যদি করার এতো ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি মরার পরে করিয়েন।
সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলাম।
আসল কথা হচ্ছে আমি চাইনা অবন্তী কোনো কাজ করুক। এমনিতে আমি সারা দিন বাইরে থাকি, এখন যদি অবন্তীও বাইরে চাকরি করে তাহলে আব্বু আম্মুকে কে দেখবে? বুড়া বয়সে দুজনেরই কষ্ট হবে।
রাতে খেয়ে আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসলাম, রুমে এসে দেখি অবন্তী ভাইয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখার পর ছবিটা রেখে দিলো।
আমি বিছানা থেকে একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম।
অবন্তীঃ জুয়েল একটা কথা বলতাম!
আমিঃ হুম বলেন।
অবন্তীঃ তুমি খাটে থাকো, আমি ফ্লোরে ঘুমাই। সারাদিন কাজ করে আসছো এখন ফ্লোরে ঘুমালে হয়তো ঘুম আসবে না।
আমিঃ আমি কাপুরুষ নই যে একটা মেয়ে মানুষকে নিচে ঘুমাতে দিয়ে আমি নিজে খাটে ঘুমাবো। আপনি ঘুমান, এমনিতে অনেক রাত হইছে।
আর কোনো কথা না বলে ফ্লোরে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি অবন্তী গোসল করে আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে। ভেজা চুলে একটু অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে।
আমি দেখেও না দেখার ভান ধরে শুয়ে রইলাম। পরে মনে হলো যে পায়ে হেটে কাজ করতে হবে রোমান্টিক মুডে থাকার মতো সময় নাই।
উঠে ফ্রেশ হয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজকেও অনেক গুলো মাল নিয়ে কভার ভ্যান ঠ্যালতে শুরু করলাম।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম, অবন্তী কেন আমাকে মেনে নিচ্ছে না, যেখানে আমিই ওকে মেনে নিবো না সেখানে তার উলটো টা হচ্ছে।
এভাবে দিন যেতে লাগলো, বিয়ে করেও আমার অবন্তীর সম্পর্ক ভাবি...
আপনারা শুধু দেখে চলে যান এতো কষ্ট করে গল্প লিখি আপনারা সারা দেন না আপনাদের একটা কমেন্ট আমাদের আনন্দ দেয়
পরবর্তী পাঠ পড়তে আপনার মূল্যবান কমেন্ট জানাবেন ...❤️❤️
চলবে...?
No comments:
Post a Comment