Friday, September 10, 2021

এক রাতের বউ ।_পর্ব_৩__

 @ এক_রাতের_বউ

#_পর্ব_৩__


আমি- প্রব্লেম কি আপনার?

আরাভ- কি প্রবলেম আবার?

আমি- গান শুনবো না আমি।

আরাভ- তো আমার কি আমি শুনবো।

আমি- আমাকে‌ এখানে‌ নামিয়ে দেন একা চলে যাবো।

আরাভ- জায়গাটা নিরাপদ না।

আমি- হাহা আর কি হারাবো আর‌ কে কথা বলছে? যে নিজেই আমার..... (আর বললাম না)

আরাভ- যাই হোক আমি দিবো না অন্য কাউকে তোমার কিছু নিতে। এক অধিকার আমিই খাটিয়েছি। এবার সামনে নাহয় তোমার স্বামী।

আমি- চুপপপপ একদম চুপ।

আরাভ- আজকাল পাগলি মেয়েটা দেখি রাগও করে। (আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো)

আমি- প্লিজ (কেঁদে ফেললাম)



আরাভ গাড়ি থামিয়ে দিলো। আমাকে কাঁদতে দেখে ওর খারাপ লাগলো। 

আমি- থামালেন কেনো?

আরাভ- কান্না থামাও।

আমি- আমার কি এবার কাঁদারো অধিকার নাই?

আরাভ- আছে কিন্তু আমার সামনে না।

আমি- আমি কাঁদবো। 

.

এই বলে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলাম। এক মুহূর্তে আরাভ গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। এবার আমার পাশে এসে আমাকে গাড়ি থেকে বের করলো। আমি কিছু বুঝছিলাম না।

.

গাড়ির বাইরে এসেও আমি কাঁদছি। এবার আরাভ আমার মুখ চেপে ধরলো, আরেক হাত দিয়ে আমার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গেলো। আমি কিছু বলতে পারছি না।

আরাভ- শুনো আনহা। আমি জানি না কেনো এমন করলাম? আমি নিজেও বুঝছি না। কেনো যেন তোমাকে পাওয়ার চিন্তা উঠে গেলো। তোমাকে মিস করতে লেগেছিলাম। তাই একবারের জন্য তোমাকে কাছে টেনে নিলাম। আর ডোন্ট ওয়ারি আমি কোনোদিন বিয়েই করবো না। আমার সামনে কেঁদো না আমি সহ্য করতে পারছি না। মাথায় পেইন উঠে যাচ্ছে তোমার কান্না শুনে। (মুখ থেকে হাত নামিয়ে নিলো)

আমি- তো আমাকে বিয়ে করেন সবই তো নিয়ে নিলেন। (একটু জোড়ে বললাম)

আরাভ- নো বেবি। আমি কাউকেই বিয়ে করবো না কোনোদিন না। নট ইভেন ইউ। 

আমি- তো মেরে ফেলুন।

আরাভ- তাও হবে না। আমি তোমার সুখ চাই।

আমি- জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়ে এসেছেন এসব বলতে। 

.

আরাভ আর কিছু বললো না। আমিও কিছু না বলে নিশ্চুপ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কেউ কিছু বলছি না। শুধু তাকিয়ে আছি‌ একে অপরের দিকে। আরাভের হাত আমার কোমড়ে নেমে এলো। ও আমার কাছে আসতে লাগলো। আমার প্রচুর ঘৃণা পেলো। সেই সময় হাত-পা বাঁধা ছিলো বলে কিছু করতে পারি নি। এখন খোলা থাকায় আরাভকে ধাক্কা দিলাম। আরাভ কিছুটা দূরে গেলো কিন্তু আর কিছু বললো না। আরাভ গাড়িতে উঠে পড়লো। বাকী রাস্তা দুজনই নিশ্চুপ ছিলাম। আমি ভাবছিলাম বাড়ির বাকীদের কিভাবে বলবো বিষয়টা। ঠিক করে নিলাম কাউকে কিছু বলতে পারবো না। কারণ মানুষ সবসময়ের মতোই মেয়েদেরই বলবে। আর এমনিও আরাভ ক্ষমতাবান। কিছুই হবে না তার।

.

বাড়ির কাছে আসতেই,

আরাভ- বাকী পথ তোমার। কখনো টাকা বা হেল্প লাগলে বলো।

আমি- আপনার কেনা পতীতা নই আমি যে আপনার টাকা নিবো।

.

এটা বলে বাড়ি এলাম।

বাড়ি যেতেই,

আম্মু- হঠাৎ মিমির মা কিভাবে অসুস্থ হলো?

আমি- ইয়ে মানে আম্মু হঠাৎ করেই কি থেকে কি। (আমি জানতাম না বিষয় তবুও বুঝলাম আরাভ মেসেজে কি দিয়েছে)

আম্মু- এখন কেমন আছে?

আমি- ভালো আছে।

আম্মু- খাইছিস? 

আমি- হুম। (যদিও খাই নি। কারণ ক্ষুধা জিনিসটা কি এটা এখন আমার মাথায় কাজ করছে না)

আম্মু- যা এতো ভিজে গেছিস কাপড় পাল্টা।

আমি- হুমম যাচ্ছি।

.

আমি ঘরে যাচ্ছিলাম। আম্মু পিছন দিয়ে ডাক দিলো,

আম্মু- আনহা।

আমি- হুম।

আম্মু- কিছু হইছে?

আমি- না আম্মু কেনো? (মিথ্যা বললাম)

আম্মু- চেহারা দেখে মনে হলো।

আমি- রাতে জাগছি তাই হয়তো।

আম্মু- আচ্ছে তাই মনে হয় যা ঘরে যা।


.

আমি ঘরে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। নিজেকে বড্ড অপবিত্র লাগছিলো। আমি গোসলে ঢুকলাম। অনেক সময় ধরে গোসল করেও নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিলো। কিছু বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লাম। কিছু সময় যেতেই ঘুমের মাঝে ডুবে পড়লাম। 

.

ওদিকে আরাভের নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছিলো। ও ওর ঘরের অনেক জিনিস ভাঙলো। কারণ ও চায় নি এমন করতে। হঠাৎ কেনো এমন করলো ও নিজেও জানে না। 

.

ও ভাবতে লাগলো আনহা আর ওর কথা। সেদিনের পরে আরো কয়েকবার আনহা আর আরাভের দেখা হয়েছিলো। একবার পহেলা বৈশাখে আনহার পড়নে ছিলো শাড়ি। সেদিন যদিও আরাভ ওর এক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুড়তে গিয়েছিলো। কিন্তু কোনো এক কারণে তার গার্লফ্রেন্ডকে বাড়ি ফিরে‌ যেতে হয়। ওদিন মজার ছলে আনহার এক বান্ধবী তার গালে‌ লাল আবির মাখিয়ে দেয়। আনহাও রেগে গিয়ে তার বান্ধবীকে রং মাখাতে তার পিছনে দৌড় দেয়। এক পর্যায়ে সব রং গিয়ে পড়ে আরাভের মুখে গায়ে। 

.

আরাভ রাগী লুকে তাকালো। আনহাকে ও দেখেই চিনে গেলো ওই ফাজিল মেয়েটা সে-ই। আমি রাগী লুক দেখেও চিনলাম না ভালো করে। কিছু সময় চোখের দিকে তাকাতেই বুঝে গেলাম যে ওটা যে রাগী মানুষটি। আরাভের চোখ সবচেয়ে আলাদা আর মায়াবী তাই আনহার চিনতে সমস্যা হয় নি।

.

আমি- ইয়ে মানে আমি না দেখি নাই।

আরাভ- what the heck 

আমি- না মানে ভুলে হইছে। সরি।

আরাভ- এতো কেয়ারলেস আবারো। আমার মুখের অবস্থা কি করছেন এটা আপনি?

আমি- কি করছি এমন সুন্দরই তো লাগছে। এমনিও আপনি রাগলে লাল হন। আমিও লাল করে দিছি। (আন্দাজি এসব বলে নিজের জিহ্বায় কামড় দিলাম। কারণ আমার মাথায় এসে গেছে যে আমি উল্টা পাল্টা বলছি)

আরাভ- কি বললেন?

আমি- না মানে আমি কিছু বলি নি অন্য কেউ বলছে। খাড়ান আমি মুছে দিচ্ছি। 

.

হাত দিয়ে মুছে দিতে গেলাম। কিন্তু ভুলেই গেছিলাম আমার হাতে আরো রং আছে। তাই ভুলের বসে আবারো আরো বেশি রং আরাভের গায়ে ভরে গেলো। আরাভ বুঝেছে বিষয়টা। তাই সে আমার হাত ধরে নিলো। আমার ভয় বেড়ে গেলো।

.

আরাভ- লাগবে না মুছতে। আমি দেখাচ্ছি কিভাবে মুছতে হয়। 

আমি- মানে?

.

আরাভ আমার দিকে এগোতে লাগলো। এভাবে তার আগানো দেখে আমার ভয় লাগতে লাগলো। আরাভ কাছে এসে আমার হাত দিয়েই আমার মুখে আরো রং লাগিয়ে দিলো।

আরাভ- এবার মুছুন টেপা টেপির মা। 

.

এটা বলে আরাভ ওখান থেকে চলে গেলো। আর বাকীরা হাসতে লাগলো এটা দেখে। সবগুলোকে পিটায় সেদিনের মতো বিষয়টা মিটিয়ে গিয়েছিলো। 

.

এভাবে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছিলো। যদিও প্রতিবার এভাবেই রাগারাগি হতো। এভাবেই কেমন করে যেন আরাভ আনহার মায়ায় জড়িয়ে যায়। স্মৃতি গুলো ভেদ করে আরাভের চোখের সামনে আনহার কান্না করা মুখটা ভেসে উঠছে। কেন যেন নিজের অজান্তে আরাভেে চোখ দিয়েও কিছুটা জল পড়লো। 

.

রাহেলা- আরাভ বাবা তোমার আব্বু তোমাকে খেতে ডাকছে। (বাহির থেকে আরাভদের কাজের বুয়া ডাকলো।)

.

আরাভ বের হয়ে গিয়ে টেবিলে বসলো। দুজন দুজনের মতো করে খেতে লাগলো। এটা নতুন না।‌ একই বাড়ির নিচে থেকেও দুজন কেনো যেন অনেক অজানা। কেউ কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। খাবার শেষে যে যার রুমে চলে গেলো। 

.

আরাভের কেনো যেন ঘুম আসছিলো না। সে তার এক নাম্বার দিয়ে আনহাকে ফোন দিলো। যদিও আনহা জানে না আরাভের নাম্বার। আনহার সব খোঁজ আরাভ বের করেছে। কিন্তু আনহা আরাভ সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। 

.

ঘুমোচ্ছিলাম,, সে সময় কল ধরে,

আমি- হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম। (কিছুটা ঘুম ও কান্না জড়ানো কন্ঠে)

আরাভ- (নিশ্চুপ।)

আমি- হ্যালো। 

আরাভ- (নিশ্চুপ)

আমি- কথা বললে বলেন নইলে রাখুন।

.

আরাভ ফোনটা কেটে দিলো। আমি বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিলাম না।

.

চলবে.....


লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার করে পাশে থাকুন ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment