চুপি চুপি ভালোবাসি।
#পর্বঃ০১
ইয়াসিন আরাফাত বাবু।
সুমাইয়া ডাক নাম (মধু)
মধুর পিরিয়ড হয়েছে কলেজ থেকে আসার পথে।কিন্তু পথে কোনো ফার্মেসী না পাওয়ায় নিজের হিজাবটা খুলে কোমরে বেধে নিলো।তবুও রক্তের দাগটা দেখা যাচ্ছে।পেছন থেকে একটা ছেলে বলল"দেখ,পিছনে সীল মারা।লাল সীল!"
এটা বলেই হাসা শুরু করলো।ওর সাথে আরো দুইটা ছেলেও হাসা শুরু করলো।মধু এগুলো শুনে জোরে জোরে হাটা শুরু করলো।এবার ওই ছেলেটা উঠে এসে মধুর পেছনে হাটতে লাগলো।মধু ভয় পেয়ে হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটাও মধুর পাশাপাশি এসে পড়লো।তারপর বিচ্ছিরি হেসে বলল"ইউ আর লুকিং সো হট!"
মধু কিছু না বলে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে হাটতে লাগলো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আশেপাশে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে।মধু যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে রাস্তাটা একটু জঙ্গলের মতো।সন্ধ্যার সময়টা ভূতূড়ে ভূতুড়ে লাগে।প্রতিদিন ওর বান্ধবী আরিয়া থাকায় ভয় লাগে না কিন্তু আজ আরিয়া আসে নি আর আজই পিরিয়ড হতে হলো।পরিয়ডের ডেটও আজ ছিলো না আরও তিনদিন পর ছিলো কিন্তু আজই কেনো হলো!তার ওপর আবার এই ছেলেটা কতো জঘন্য জঘন্য কথা বলছে।কথাগুলো শুনলেই গা ঘিনঘিন করে।এই রাস্তা থেকে একটা দৌড়ে বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এই অবস্থায় মুখ বুঁজে থাকতে হবে।যতো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারলেই হয়।অনেক্ক্ষণ ধরে ছেলেটা বিশ্রী বিশ্রী কথা বলছিলো মধু কিছু না বলে চুপচাপ হাটছিলো এবার হঠাৎ করে ছেলেটা মধুর হাত চেপে ধরলো।মধু আতংকিত চোখে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল"হাত ছাড়ুন প্লিজ।"
"হাত তো ছাড়ার জন্য ধরি নি।আজকে বাসায় যাওয়া লাগবে না।আমার সাথে চল।"
"হাত ছাড়ুন ভাইয়া প্লিজ!বাসায় যেতে হবে আমাকে।" মধু কাদো কাদো গলায় বলল।
"বাসায় কালকে যাবি।আজকে আমার সাথে চল।"
মধু কাঁদতে কাঁদতে হাত মুচড়ানো শুরু করলো।কিন্তু ছেলেটা নির্দয়ের মতো ওকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।মধুর মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না।হঠাৎ মধুর যেনো কি হলো সজোরে ছেলেটা হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।ছেলেটা তৎক্ষনাৎ মধুর হাত ছেড়ে দিলো।মধু হাত ছাড়া পেয়েই দৌড় লাগালো।ছেলেটাও পেছনে দৌড়াচ্ছে।মধু সামনে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না অন্ধকার নেমে যাওয়ায়।হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন ধরে ফেললো।মধু অবছা আবছা আলোয় বুঝতে পারলো কোনো মানুষ হয়তো!মধুকে দাড় করিয়ে সামনের জন পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট বের করলো।ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় মধুর ভীত আর কান্নারত চেহারা দেখে বিচলিত হয়ে ইয়াদ বলল"রিল্যাক্স,কি হয়েছে।এভাবে দৌড়াচ্ছিলেন কেনো?"
মধু কাঁদতে কাঁদতে বলল"প..পিছছনে এ..একককটা ছছছেলে...."এতটুকু বলতে না বলতেই ছেলেটা মধুর কাছাকাছি এসে দাড়ালো।ফ্ল্যাশলাইটেট আলোয় ইয়াদ ছেলেটার দিকে তাকালো।তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে বলল"আপনি একটু প্লিজ ফোন টা ধরুন। যাতে আমি ওকে দেখতে পাই।বাকিটা আমি দেখছি।"
মধু কাপাকাপা হাতে ফোনটা ধরলে। ইয়াসিন আরাফাত বাবু ডাক নাম, (ইয়াদ) ছেলেটার সামনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল"কি ভাই,ওনাকে বিরক্ত করছেন কেনো?"
"তোর সমস্যা কি?"
"অনেক সমস্যা।আমি এগুলো সহ্য করতে পারি না।আমার হাত নিশপিশ করে।" এটা বলে কষে দুটো ঘুষি দিয়ে কলারটা চেপে ধরে মধুর সামনে নিয়ে এসে বলল"সরি বল।"
ছেলেটা মধুর দিকে তাকিয়ে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরি বলল।তারপর ইয়াদ আরো দুটো থাপ্পড় দিয়ে ছেলেটা ছেড়ে দিলো।ছাড়া পেয়ে ছেলেটা দৌড়ে পালালো।ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ইয়াদ নিজের জ্যাকেট টা খুলে মধুর কোমরে বেঁধে দিলো।মধু একটা টু শব্দও করে নি।শুধু ফ্ল্যাশলাইটের উজ্জ্বল আলোতে একটা সরল মুখশ্রীর একটা ছেলেকে দেখতে লাগলো।ছেলেটার মুখে একটা আশ্চর্য হাসি আছে।যেটা সবাইকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট।সাথে চাপ দাড়ি আর মোচ ফুল প্যাকেজ।সব মিলিয়ে এতো সুন্দর লাগছিলো মধুর!যে এক মুহুর্তের জন্য ও সবকিছু ভুলে গেছিলো।ইয়াদের ডাকে মধুর হুশ এলো।ইয়াদ বলল"আপনার বাসা কোথায়?"
"আরাগনগরের ২ নম্বর গলি।মহসিন ভিলা।"
"ওহ!তাই।কতো তলায়?"
"চারতলায়।"
"ওহ,আচ্ছা।আমি তিনতলায়।আজই আসলাম ওই বাসায়।চলুন আপনাকে দিয়ে আসি।"
ইয়াদ পিছনে আর মধু সামনে হাটতে লাগলো।বাসার সামনে আসতেই ইয়াদ বলল"এবার আপনি চলে যান।"
ইয়াদ এটা বলে চলে যেতে নিলেই মধু পেছন থেকে ডেকে বলল"ধন্যবাদ।"
"এসব ধন্যবাদের কিছু নেই।আমরা প্রতিবেশী।তাই প্রতিবেশীই প্রতিবেশীর সাহায্য করবে স্বাভাবিক।আপনার বয়সই আমার বোনও আছে তাই এটা আমার কর্তব্য।এখন বাসায় যান।"
মধু সৌজন্যমূলক হেসে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে মধু জ্যাকেট টা কোমর থেকে খুলে ব্যাগে ভরে নিলো।কারণ এটা বাসার কেউ দেখলে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে।এমনিতেই কৈফিয়ত দেওয়াটা মধু পছন্দ করে না।জ্যাকেট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে মধু দরজায় নক করলো।দুই মিনিট পর মধুর ছোটো বোন মিলি দরজা খুললো।মধু ভেতরে ঢুকতেই মিলি বলল"আপু তোর পেছনে তো অবস্থা খারাপ।রাস্তা দিয়ে এসেছিস কিভাবে?"
"হেঁটে আসছি।এখন চুপ কর।আম্মু কই?"
"নিচের তলায় গেছে।নতুন ভাড়াটিয়া আসছে ওদের সাথে দেখা করতে।"
"ও,,আচ্ছা।দরজা আটকে দে।আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।আম্মু আসলে খুলে দিস।"
"আচ্ছা।"
মধু ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ব্যাগ থেকে জ্যাকেট টা বের করে ওয়াশরুমে গিয়ে রাখলো।আর নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
.
জামা কাপড়গুলো ধুয়ে মধু গোসল করে নিলো।ওরা ওগুলো বারান্দায় শুকাতে দিলো।মধুর মা এসে ওর দরজায় নক করা শুরু করলো।মধু চুল ঝারতে ঝারতে দরজা খুললো।আইরিন রহমান বললেন"কি রে কলেজ থেকে এসে এভাবে ঘরে বসে আছিস কেনো?খাওয়া লাগবে না?"
"হ্যাঁ আসছি।মাত্রই গোসল করলাম।"
"তাড়াতাড়ি আয়।"
মধু চুল গুলো তোয়ালে পেচিয়ে বেধে খেতে চলে গেলো।খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।হঠাৎ মনে হলো জনালায় কিছু একটা শব্দ করছে।মধু টেবিল থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দেখলো একটা বাস্কেটে পায়েস আর একটা চিরকুট।মধু ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো।আচ্ছা আমাকে এগুলে পাঠাবে কে?ওপরের তলায় তো কোনো ছেলে থাকে না।নিশি আপুরা থাকে।আপুর তো ভাইও নাই তাহলে এগুলো পাঠাবে কে?মধু বাস্কেট টা হাতে নিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো।তারপর বস্কেট থেকে পায়েসের বাটিটা তুলে নিয়ে চিরকুট টা খুললো।
চিরকুটে লিখা ছিলো
"ইয়াদ"
আমি খুশী হয়েছি তুমি এই বাসায় শিফট হয়ে আসছো।এবার আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো।তোমার জন্য পায়েস রান্না করছি।খেয়ে জানাবা কেমন হইছে।"
তোমার "নিশি"
পুরো চিটকুট টা পড়ে মধু বুঝতে পারলো কাহিনি কোথায়।নিচতলায় নিশি আপুর বফরা আসছে।এইজন্য নিশি আপু এট পাঠাইছে কিন্তু এটা এসে মধুর জানালায় ফেঁসে গেছে।মধু পায়েসের বাটিটা তুলে খাওয়া শুরু করলো।ওহ!কি টেস্টি।খাওয়া শেষ করে বাটিটা বাস্কেটে রেখে একটা কাগজে লিখলো
"নিশি"
আই লাভ ইউ,অনেক মজা হইছে।এতো ভালো রান্না করো তুমি!আরেকটু পাঠাও প্লিজ!"
তোমার"ইয়াদ"
এটা লিখে পায়েশের বাটি আর চিরকুট টা বাস্কেটে ভরে আবার রশিতে ঝুলিয়ে দিয়ে এলো।হাসতে হাসতে মধুর পেট ব্যাথা করছে।কিন্তু ইয়াদ টা কে?মধু মনে মনে বলল"যে হওয়ার হোক।খালি আমার ক্রাশবয় না হলেই হয়।"
কিন্তু মধু তখনও জানে না তার ক্রাশ বয় এর নামই ইয়াদ।
একটু পর আবার বাস্কেট এসে মধুর জানালায় ফাঁসলো।মধু দাত কেলিয়ে আবার জনালার পাশে গেলো।যখনই বাস্কেট টা হাতে নিতে যাবে তখন এটা নিচে নামা শুরু করলো মধু তড়িঘড়ি করে নিতে যেয়েও পারলো না এটা নিচে চলে গেলো।মধু রশিটা ধরে টান ছে কিন্তু আসছে না।নিচ থেকে কেউ যেনো ওটা ধরে রেখেছে।
চলবে....
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর কেমন হলো জানাবেন।)


No comments:
Post a Comment