চুপি চুপি ভালোবাসি।পর্বঃ০৫
হাতে টান পড়ায় মধু ঘুরে দাড়ালো।ইয়াদ মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল"সরি,আসলে আমি ভেবেছিলাম...... যাইহোক বাদ দাও।তোমার ভবিষ্যৎ লক্ষ কি?মানে কি হতে চাও?"
"অনেক অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতে চাই।"
"কেনো?এতো টাকার প্রয়োজন কেনো?"
"কি বলেন!টাকা থাকলে সবকিছু আপনার।টাকা থাকলে মানুষের ব্যাবহার বদলায় মোটকথা মানুষটাই বদলায়।প্রিয়মানুষ গুলোকে হারানোর ভয় থাকে না।সবার প্রিয় হওয়া যায়।কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না।"
মধুর কথা শুনে ইয়াদ মধুর চোখের দিকে তাকালো।ওর চোখজোড়ায় কষ্ট স্পষ্ট।কিন্তু এতো ছোটো বয়সে এতো কষ্ট কিসের!ইয়াদের কৌতুহল হলো।কিন্তু এখন কিছু জিগ্যেস করলে মেয়েটা কিছুই বলবে না।আগে ফ্রী হই তারপর হয়তো বলতে পারে।তাই ইয়াদ বলল"তোমার নামটা জানা হলো না।"
"তয়ত্রি রহমান মধু।" মধু সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।
"ওহ!নামটা ইউনিক!"
মধু দুই ঠোঁট মিলিয়ে হেসে বলল"ধন্যবাদ।আপনার নামতো ইয়াদ!তাই না?"
"আবরাহাম খান ইয়াদ।"
ইয়াদ কথা শেষ করতেই ইরিনা চলে এলো।ইরিনা এসে মধুর পাশে দাড়িয়ে বলল"হেই মধু,আমার ভাইয়ের সাথে কি কথা বলছো?"
"তোর জানতে হবে না।তুই নিচে যা।" ইয়াদ বিরক্ত কন্ঠে বলল।
"হ্যাঁ যাবো তো।মধুও যাবে আমার সাথে।চলো তো মধু।"
"কেনো ও যাবে কেন?তোর মতো পেত্নীর সাথে ও যাবে না।"
ইয়াদের কথা শুনে ইরিন বলল"আচ্ছা,ওকে মধুই বলুক ও কি এখানে থাকবে নাকি আমার সাথে যাবে।"
মধু দাঁত বের করে হেসে বলল"ইরিনা আমার বান্ধবী তাই আমি ওর সাথেই যাবো।"
"কিন্তু আমি তো তোমার বান্ধবীর ভাই।" ইয়াদ অসহায় মুখ করে বলল।
ইরিন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলল"তুমি চুপ করো।ও আমার সাথেই যাবে।"এটা বলে মুখ বাঁকা করে মধুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।ইয়াদ ওদের সাথে ঘরে গেলো।ইরিন মধুকে নিজের ঘরে বসিয়ে খাবার নিয়ে এলো।খাবার দেখে মধু বলল"এগুলো আনলে কেনো?আমিতো খেয়ে এসেছি।"
"খেলে আবার খাবে।কোনো কথা চলবে না।"
মধু আর কি করবে।ইরিনের জোরাজোরিতে খেতে বাধ্য আর পেটে খুদাও ছিলো।খাওয়া শেষ করে ইরিন আর মধু বকবক করছিলো।ইয়াদ পাশের রুমে বসে ওদের হাসির শব্দ শুনছিলো।একটু আগে উঁকি দিয়ে দেখেও এসেছিলো।মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে কি গম্ভীর দেখাচ্ছিলো কিন্তু এখন হাসছে।মেয়েটাকে হাসিতেই মানায়।হাসলে খুব নিখুঁত ভাবে দুটো গালে টোল পড়ে।ইয়াদের মন চায় গাল দুটো টেনে দিতে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মধু বিদায় নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলো।এতটুকু সময়ে মোটামুটি দুজনই দুজনের সাথে সহজ হয়েছে।ইরিন একটু বেশিই কথা বলে।তাই পুরোটা সময় মুখ এক সেকেন্ডও বন্ধ ছিলো না।যাইহোক মন খারাপটা কিছুটা হলেও কমেছে।কিন্তু ঘরে গিয়ে আবার মুখ ভার করে আইরিন রহমানের সামনে দিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।
রাত আট'টা।মধু সেই যে দরজা বন্ধ করেছে এখনো খোলে নি।দরজা বন্ধ করে পড়ছে।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো।মধু দরজা খুলতেই দেখলো নিশি দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখ করে।নিশিকে দেখে মধু মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল"আরে নিশি আপু!আসো ভেতরে এসে বসো।"
নিশি এসে মধুর খাটে বসলো।মধু বলল"তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা আনছি।"
নিশি মধুর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল"চা লাগবে না।তুমি আমার পাশে একটু বসো।তোমার সাথে কথা আছে।আর দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসো।"
মধু মনে কৌতুহল রেখে দরজা চাপিয়ে নিশির পাশে গিয়ে বসলো।নিশি মধুর দিকে তাকিয়ে বলল"তিনতলায় নতুন আসছে যে একটা ছেলে ইয়াদ নাম ওকে চেনো?"
"হ্যাঁ।কথা হয়েছে হালকা।"
"ওহ!শোনো ওর আর ওর বোনের সাথে কথা বলবে না।ওদের দেখলে এড়িয়ে চলবে।"
"কেনো আপু?"
"কৈফিয়ত দিবো না আমি তোমাকে।যেটা বললাম সেটা করবা।আর যদি না করো তোমার আম্মুকে তো চিনো তাই না?আন্টিকে একবার বললে সে তোমার কি করবে জানো তো!নাকি মনে করিয়ে দিবো।"
মধু নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করে রইলো।কারণ মধু জানে ওর মা জানলে বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।গত রোজায় একটা ঘটনা এখনো মনে পড়ে মধুর।সারাদিন রোজা রেখে মাথাটা ঘুরাচ্ছিলো।ওর ক্লাসমেট রাদিত আর রিহা ওকে দিয়ে গিয়েছিলো।মধু ওদের বাসায় এনে বসায়।তখন ওদের সামনে আইরিন রহমান কিছু না বললেও ইফতারির পর মধুকে অনেক মেরেছিলো শরীরে দাগ বসে গেছিলো।ওই মারের চোটে মধুর তিনদিন ভয়ানক জ্বর আসে।তিনদিন রোজাও রাখতে পারে নি।তারপর মধুর মা কড়া করে বলে দিয়েছিলো যেনো কোনো ছেলে বন্ধু না থাকে।আর যদি কখনো কোনো সম্পর্কে জড়ায় তাহলে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।মধু ওই ঘটনার পর থেকে ছেলেদের সাথে কম কথা বলে।আর বাসায় আনা তো দূরের কথা।আর এখন যদি নিশি ওর মায়ের কাছে ইয়াদকে নিয়ে কিছু বলে তাহলে মনে হয় এখানে আর থাকাই হবে না।
মধু কিছু বলছে না দেখে নিশি বলল
"কি ভাবছো!শোনো কিছু ভেবে লাভ নাই।পস্তাবে।"
এটা বলে নিশি উঠে দাড়ালো।দরজার কাছে গিয়ে বলল"মনে থাকে যেনো আমার কথা।নাহলে.....
এটা বলে নিশি আর না দাড়িয়ে চলে গেলো।মধুর আবার মন খারাপ হলো।চারদিকে শুধু দুঃখ আর দুঃখ।মধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়তে বসলো।রাত দশটার দিকে মিলি খাবার দিয়ে গেলো ঘরে।মধু চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
------------------
শরতের নীল আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।চারপাশে হালকা বাতাশ।রোদের তাপও আছে।তবুও বাতাসটা শরীরে শিহরণ জাগায়।মধু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।আজ কলেজে যাবে না।একটু আগে মিলি আর আইরিন রহমান মুন্সিগঞ্জ চলে গেছেন।নানী নাকি অসুস্থ।আই মধুকে বাসায় রেখে গেছে।মধুও তাই চেয়েছিলো।নানীর সাথে সম্পর্ক খারাপ না হলেও ওই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে না মধুর।তার অবশ্য একটা কারণও আছে।ওই বাড়িতে গেলে কয়েকটা মহিলা সব সময় মধুর বিয়ের কথা বলে নানারকম কথা বলে মায়ের মাথা ভরিয়ে ফেলে।মধুর প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।এদের কি খেয়েদেয়ে কাহ নেই!কারো বিয়ে নাহলে কি এরা মরে যাবে?নাকি নিজের জামাই দিয়ে দিবে।যত্তসব!সেইজন্যই মধু নানীর বাড়ি যায় না।
বারান্দা থেকে ভেতরে এসে বসলো মধু।দুই তিনদিন কলেজে যাওয়া লাগবে না।ভেবেই শান্তি লাগছে।দুপুরের জন্য আইরিন রহমান রান্না করে গেছেন।আর রাতে নিজের রান্না করতে হবে।খুব বেশি ভালো রাঁধতে না পারলেও খাওয়া যায় এতটুকু মধু রাঁধতে পারে তাই তেমন কোনো চিন্তা নাই।মধু সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে টিভি ছাড়তেই সামনে একটা মুভি পড়লে 'গোলমাল'।মধু বসে গেলো মুভিটা দেখতে।মুভি শেষ হলো বারোটায়।মুভিটা দেখে অনেক হেসেছে মধু।এখন টিভি বন্ধ করে জামা কাপড় নিতে গেলো।গোসল করতে হবে।কিন্তু এই জামাটর ওড়না পাওয়া যাচ্ছে না।হঠাৎ মনে পড়লো দুদিন আগে এই জামা টাই ধুয়ে ছাঁদে দিয়েছিলো।কিন্তু ওড়না মেলার জায়গা ছিলো না তাই মধু একটা শার্টের ওপর মেলেছিলো।কিন্তু জামা কাপড়গুলো তো সেদিন ও আনে নি।ওর মা এনেছিলো।ওড়নাটা কি এনেছিলো!মধু চিন্তায় পড়ে গেলো।তন্ন তন্ন করে পুরে ওয়ারড্রব খুঁজলো কিন্তু না ওড়না তো দূর থাকে ওড়নার সুতাও খুঁজে পেলো না।তারমানে ওড়নাটা আনা হয় নি।এখন ওড়না ছাড়া কিভাবে পরবে এটা!আর ওড়নাটা নিয়েছে কে!কেউ যদি চুরিও করতো তাহলে জামা কাপড় বাদ দিয়ে ওড়না নিলো কেনো?হয়তো কারো কাপড়ের সাথে চলে গেছে।কি আর করার।ওই জামাটার সাথে অন্য একটা ওড়না নিলো মধু।
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে জব্বর ঘুম দিলো মধু।বিকেলে উঠে চা-বিস্কুট খেয়ে বাইরে বের হলো ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না।সামনে একটা পুকুর আছে।মধু ওই পুকুরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
"মধু...." হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ ডাকতেই মধু পিছনে তাকালো।ইয়াদ আসছে।মধুর মুখে মৃদু একটা হাসির ঝলক দেখা গেলো।কিন্তু ইয়াদের পিছনে নিশিকে দেখে হাসিটা মিলিয়ে গেলো।মধু ওইখান থেকে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো।ম
No comments:
Post a Comment