Friday, October 1, 2021

চুপি চুপি ভালোবাসি। পর্বঃ০৬

চুপি চুপি ভালোবাসি।  পর্বঃ০৬

ইয়াদের কাছ থেকে যখন অনেকটা দূরে চলে আসলো নিশি আর মধু তখন নিশি মধুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল"শোনো ও যদি তোমার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে ওর সাথে মিসবিহেভ করবা।এমন ভাব করবা ওকে তোমার সহ্য হয় না।"


মধু নিশির কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ালো।নিশি আবার বলল"এবার ঘরে যাও।"


মধু সোজা বাড়ির দিকে রওনা দিলো।আর মনে মনে বলল'এমন ছ্যাচড়ামি করার মানে হয়!এমন ভাব করছে মনে হয় ওর বয়ফ্রেন্ডকে আমি চুরি করে নিয়ে যাবো।শুধু আম্মুর জন্য ওকে আমি কিছুই করতে পারবো না।তা নাহলে আমার ওপর হুকুম ফলানো বের করতাম।মধু রাগে গজগহ করতে করতে হাঁটতে লাগলো।

---------------

মধুকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিশি ইয়াদের কাছে যেতে লাগলো।ইয়াদ নিশিকে নিজের দিকে আসতে দেখে অন্যদিকে হাটা শুরু করলো।নিশি দ্রুত হেটে ইয়াদের পাশাপাশি এসে বলল"দাড়াও,কথা আছে।"


"আমার তোমার কথা শোনার সময় নেই।"


"শুনতে হবে তোমাকে।" এটা বলে নিশি ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।ইয়াদ নিশির হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর রেগে দাঁত কটমট করে বলল"আমার হাত ধরার সাহস কোথাও পাও তুমি?তোমাকে না বললাম আমাকে বিরক্ত করতে না।"


"আচ্ছা আমাকে আরেকবার মাফ করা যায় না?"


"না,তোমাকে এবার মাফ করলে নিজেকেই নিজে মাফ করতে পারবো না।এর আগেও দু'বার মাফ করেছি তোমাকে।আর না।"


নিশি দুইমিনিট চুপ করে রইলো।তারপর বলল"মধুকে পছন্দ করো?"


"আমি তোমার মতো না যাকে দেখবো তাকেই লাগবে।এতো সহজে কাউকে ভালোবাসাও যায় না আবার ভোলাও যায় না।"


এটা বলে ইয়াদ চলে গেলো।নিশি ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

------------------

দিনের বেলা বাসায় একা থকা যায় কিন্তু রাত হলে সব আজব আজব জিনিস মনে পড়ে।মনে হয় বাসায় আরো কেউ আছে।তেমনই অবস্থা মধুরও।সারাদিন খুব সুন্দর করে কাটালেও সন্ধ্যা থেকে ভয় করছে।তাই দরজা জানালা সব বন্ধ করে বসে আছে মধু।হঠাৎ দরজায় নক করলো কেউ একজন মধু লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ইরিন দাঁড়িয়ে আছে।মধু দরজা খুলতেই ইরিন বলল"কেমন আছো?"


"আলহামদুলিল্লাহ তুমি?"


"ভালো আছি।তুমি মনে হয় বাসায় একা তাই না?"


"হুম,আম্মু নানু বাসায় গেছেন।"


"ওহ!"

ইরিন হাতে থাকা ওড়নাটা মধুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল"এটা তোমার না?"


মধু ওড়নাটার দিকে এক পলক চেয়ে বলল"হ্যাঁ এটা আমার।"


ইরিন মধুর হাতে ওড়নাটা দিয়ে বলল"এই ওড়নাটা নিয়ে বাসায় যুদ্ধ হইছে জানো!ইয়াদ ভাইয়া গোসল করতে যাওয়ার সময় শার্ট বের করতেই ওড়নার সুতা শার্টের বোতামে আটকে ছিলো।ভাইয়া তো রাগ ওড়না দেখে তারপর আমাকে ডেকে জিগ্যেস করলো এটা আমার কি না!আমি দেখেই বললাম এটা আমার না।এটা আম্মুরও না।এবার আমি আর আম্মু ভাইয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম।পরে ভাইয়া অসহায় মুখ করে আম্মুকে বলল'''আম্মু বিশ্বাস করো আমার সাথে কারো সম্পর্ক নেই।এটা কিভাবে আমি জানি না।"'


ইরিন হাসতে হাসতে আবার বলল"তখন ভাইয়ার চেহারাটা দেখারা মতো ছিলো!!


ইরিনের কথায় মধুও হাসলো।তারপর আরো দু একটা কথা বলে ইরিন চলে গেলো।মধুও দরজা বন্ধ করে দিলো।

-----------------

রাত বারোটা।মধুর এক চিলতে ঘুমও আসছে না।প্রতিদিন দশটা বাজলেই ঘুমে চোখ ঢুলতো কিন্তু আজকে ঘুমের বালাইও নেই।সেটার কারণও আছে।মধু নিজের ঘরের লাইট বন্ধ করে নি।লাইট বন্ধ করলেই মনে হয় কেউ ওর পাশে শুয়ে আছে।এই ওভার থিংকিং এর জন্য একটুও ঘুম আসছে না মধুর।


দীর্ঘসময় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় মধুর ঘুম চলে এলো।

-------------------

সূর্য এখনো ওঠে নি কিন্তু অন্ধকার সরে গিয়ে আকাশ পরিস্কার হয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য উঠবে।আজ মধুর অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে।দেরিতে ঘুমিয়েও তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে দেখে মধু নামাজ পড়ে হিজাব পরে বেরিয়ে পড়লো।সকালে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে মধুর কিন্তু ইদানীং ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে যেতেও পারে না তবে আগে প্রতিদিন নিয়ম করে যেতো।


মধু হাঁটতে হাটতে পুকুর পাড়ে চলে এলো।জায়গা সুন্দর!পুকুরটা চারদিকে বাঁধাই করা।আশেপাশে গাছাপালা পরিবেশটা মোহনীয় করে তুলেছে।পুকুরপাড়ের রাস্তাটা ঢালাই করা।প্রতিদিন সকালে বিকেলে অনেকেই এখানে হাটেন।মধু বাঁধাই করা ঘাটে গিয়ে বসলো।তারপর সেলোয়ারটা হালকা উঠিয়ে পা ডুবালো।শীতল পনির শিহরণ যেনো মধুর সারা শরীরের ছড়িয়ে পড়ছে।একটুপর কেউ একজন পিছন থেকে ডাকলো মনে হলো।মধু বসা থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে জগিং স্যুট পরে।ইয়াদকে দেখে মধু কিছু না বলে আবার সামনের দিকে ঘুরলো।ইয়াদ মধুর একটু কাছে এসে বলল"উঠে আসো।কথা আছে।"


মধু উঠলো না।ইয়াদের বিরক্ত লাগছে।ইয়াদ আবার বলল"ওঠো বলছি!না আসলে কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।"

ইয়াদের কথায় এবার মধুর টনক নড়ে।পা দুটো উঠিয়ে ঘাট থেকে উপরে চলে আসে।তারপর বলে"কি বলবেন বলুন।"


"সমস্যা কি তোমার।এমন করছো কেনো?কালকে ডাকলাম উত্তর দিলে না।এড়িয়ে চলে গেলে।এখনও তাই করলে!এনি থিং রং?


" আপনার সাথে কথা বললে আমার ঘরে অশান্তি লাগবে।"মধু সরাসরি বলে দিলো।এতো নাটক ভালো লাগে না।


"মানে!কি অশান্তি?"


"আপনার এক্স নিশি আপু আমাকে বলেছে আপনার সাথে কথা বলতে না।বললে আমার আম্মুকে বলে দিবে।আর আম্মুকে বললে আমি মার খাবো।তার চেয়ে কথা না বলাই ভালো।"


"ওও....আচ্ছা এইজন্যই কাল নিশি ওমন করলো।আচ্ছা তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই তাহলে ও কিছু করতে পারবে না।"


"কি বুদ্ধি?"


"তুমি এরপর আমার সাথে কথা বলবে ওর সামনেই পরে ও কিছু বললে বলবে আমিও তোমার নামে অনেক কিছু জানি।তোমার আম্মুকে বললে সেটা কেমন লাগবে।"


"ওর নামে তো আমি কিছুই জানি না।" মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।


"জানা লাগবে না।শুধু এতটুকু বললেই হবে।"


"আচ্ছা ভাইয়া।" এটা বলার পর মধু খেয়াল হলো 'ভাইয়া' মনের ভূলে ডেকে ফেলেছে।ক্রাশকে কেউ ভাইয়া ডাকে না কি!আর এদিকে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল"তুমি ভাইয়া বললে কেনো?"


"তো কি বলবো?"


"কিছু বলা লাগবে না তবু ভাইয়া বলবে না।"


"কেনো?"


"সুন্দরী মেয়েরা ভাইয়া বললে কষ্ট লাগে।"

ইয়াদের কথা শুনে মধু মিটমিটিয়ে হাসলো।ইয়াদ নিজেও মুচকি হেসে বলল"বাসায় যাবে নাকি আমার সাথে দৌড়াবে?"


"নাহ!আপনিই দৌড়ান।আমি এমনিতেই চিকনা দৌড়ালেতো বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।"


ইয়াদ হেসে বলল"আচ্ছা যাও।"


মধু বাসার দিকে রওনা দিলো।আর ইয়াদ দৌড় শুরু করলো।

------------------

সারাদিন পড়াশোনা ঘরের কাজ আর রান্নাবান্না করেই সময় শেষ মধুর বাইরে যাওয়ার সময়ই পায় নি।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।বিকেলে উঠতেই দেখলো আকাশ কালে হয়ে আছে বাইরে প্রচুর বাতাস!মধু তাড়াতাড়ি দরজা জানালা বন্ধ করে ছাঁদে গেলো।কয়েকটা কাপড় শুকোতে দিয়েছিলো।আল্লাহই জানে আছে কি না!নাকি সব উড়িয়ে নিয়ে গেছে।ছাঁদে গিয়ে দেখলো না আছে কিন্তু বাতাসে কাপড়গুলো পতাকার মতো উড়ছে।মধু কাপড়গুলো নিয়ে চলে আসতে নিলেই হঠাৎ বালুর মতো কিছু একটা চোখের মধ্যে পড়তেই মধু চোখ বন্ধ করে ফেললো।চোখে অনেক জ্বালা করছে।চোখ খুলতেই পারছে না।এদিকে ইয়াদ ছাঁদে উঠতেই দেখলো বাতাসের মধ্যে মধু দাড়িয়ে আছে চোখে হাত দিয়ে।ইয়াদ ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল"এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?"


"চোখে কিছু একটা পড়েছে।চোখ জ্বালা করছে,কচকচ করছে।"


ইয়াদ মধুর হাতটা সরিয়ে চোখটা আলতো করে খুলে দেখতে লাগলো কিছু পড়েছে কি না!কিন্তু নাহ!কিছুই দেখতে পারছে না।ইয়াদ মধুর চোখে কয়েকবার ফু দিয়ে বলল"এখনও কি খারাপ লাগছে?"


মেহের বলল"না এখন ঠিক আছি তবে হালকা কচকচ করছে।"


"বাসায় গিয়ে মুখে পানি দিয়ে দিও।"


"আচ্ছা।"

মধু আর ইয়াদ দুজনেই নিচে নেমে এলো।মধু নিজের ঘরে চলে গেলো আর ইয়াদ নিচে নে

No comments:

Post a Comment