চুপি চুপি_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৩
ইয়াদের কথা শুনে মধু মনে মনে বলল'এহ!কি এটিটিউড।এটিটিউডে পা মাটিতে পড়ে না।'মনে মনে এটা বললেও মুখে কিছু বলতে পারলো না।চুপচাপ চলে যেতে নিয়েই মনে পড়লো পায়েসের বাটির কথা।পায়েসের বাটিও কি দিবে না?মধু পিছনে ফিরে ইয়াদকে ডাক দিলো
"শুনুন।"
ইয়াদ দাড়াতেই মধু সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বলল"আচ্ছা আমাদের বাটগুলোও কি দিবেন না?ওগুলো দিয়ে দিন প্লিজ।ওগুলো কিন্তু আমার না ওগুলো আম্মুর।আমার আম্মু অনেক রাগী।"
ইয়াদ কিছু না বলে দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলো।মধু বেকুব হয়ে ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।যেনো ও কোনো মানুষই না।কেমন পাত্তা না দিয়েই চলে গেলো।মধু বুঝতে পারছে না চলে যাবে নাকি থাকবে!মধু পা বাড়িয়েছে সিড়ির দিকে যাওয়ার জন্য।তখনই ইয়াদ আসলো।হাতে দুটো বাটি।মধুর হাতে দিয়ে বলল"এই বাটিগুলো আপনি আমাকে দেন নি।এগুলো আপনার আম্মু আমার আম্মুকে দিয়েছে।তাই এগুলো আমি রাখতে পারবো না।আর এই জ্যাকেট টা আমি নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনাকে দেই নি।আপনাকে সাহায্য করার জন্য দিয়েছি।বুঝেছেন?"
"জ্বি," এটা বলে মধু ওপরের দিকে চলে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো''কি অদ্ভুত ছেলে।"
তারপর বাসায় এসে নিজের রুমে এসে দেখলো জানালায় আবার ঝুড়িটা আটকে রয়েছে।মধু গিয়ে দেখলো আবারো পিঠা দিয়েছে নিশি।মধু ঝুড়িটা নিয়ে পিঠাগুলো খেয়ে চিরকুট টা খুললো।
"ইয়াদ"
সোনা,জানু। আরো দিবো?
এতটুকুই লিখা ছিলো।মধু আরেকটা কাগজে লিখলো
"নিশি"
না জানু আজকে আর না।আই লাভ ইউ বেবি।
এটা লিখে ঝুড়িতে রেখে রশিতে ঝুলিয়ে খাটে বসে হাসতে হাসতে বলল"নিশি আপু জানেও না সে কার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।যাক কারো বয়ফ্রেন্ড হয়ে এতো ভালো খাবার পাবো ভাবতেও পারি নাই।"
মধু দশটা পর্যন্ত পড়লো।এরপর আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।তাই টিভির রুমে গেলো।গিয়ে দেখে ওর মা সোফায় বসে মুভি দেখছে।মধুও মায়ের পাশে বসে পড়লো।আইরিন রহমান টিভির থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন"কি করিস এখানে?পড়া শেষ?"
"না মা কিন্তু এখন পড়তে ইচ্ছে করছে না।"
"না করলে গিয়ে শুয়ে পড়।সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে বসবি।"
"আচ্ছা একটু বসি।আধঘন্টা পরে যাই।"
"তোরে আমি চিনি না!তুই টিভির সামনে বসলে দুনিয়াদারী ভূলে যাবি।তাড়াতাড়ি যা মার না খেতে চাইলে।"
কি আর করার অগত্যা চলে যেতে হলে মধুর।ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।যেহেতু আর পড়তে ইচ্ছে করছে না সেহেতু শুয়ে পড়াই উত্তম।
------------------
শুক্রবারে অন্যান্য দিনের চেয়ে আরো বেশি ব্যাস্ত থাকে মধু।যেমন আজকে!প্রতি শুক্রবারের মতো এই শুক্রবারেও নিজের জামাকাপড়গুলো নিজের ধূয়ে শুকোতে দিতে হয়।তাই তো মধু জামা কাপড়গুলো ধূয়ে ছাঁদে নিয়ে চললো।কিন্তু ছাদের এক কোণাও খালি নেই।সবগুলো দড়িতে জামা কাপড় ঝুলানো।মধু জামাগুলেকে কিছুটা কুঁচকে কুঁচকে মেলে দিলো।মোটামুটি অনেক কষ্টে জামাগুলো শুকাতে দিলো।কিন্তু একটা ওড়না কোথাও দিয়ে পারছে না তাই এটা একটা শার্টের ওপর মেলে দিলো।মধু জানে না শার্ট টা কার।যদি জানতো শার্ট টা ইয়াদের তাহলে জীবনেও দিতো না।
জামাকাপড় শুকাতে দিয়ে মধু নিচে নেমে এলো।চারতলা দিয়ে নামার সময়ই বুঝতে পারলো নিশিদের ঘরে আজকে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।মধু মনে মনে বলল"আজকে তাহলে আমারও বিরিয়ানি খাওয়া হচ্ছে।"এটা বলে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।বাসায় আসতেই দেখলো একটা মেয়ে সোফায় বসে ওর মায়ের সাথে বকবক করছে।মেয়েটা কে?মধু মেয়েটাকে চেনে না।মধু ঘরে ঢুকতেই ওর মা বলল"মধু,এখানে বস।"
মধু মায়ের পাশে বসে পড়লো।মধুর মা মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল"ও আমার বড় মেয়ে মধু।তোমার সাথেই পড়ে।ও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।"
মেয়েটা মৃদু হেসে মধুর দিকে তাকিয়ে বলল"হাই,আমি ইরিন।তিনতলায় নতুন আসছি।"
"ওহ!"
"তুমি কোন কলেজে পড়ো?"
"আরাগনগর ডিগ্রি কলেজ।তুমি?"
"তোমাদের পাশেই আরাগনগর মহিলা কলেজ।"
"ওহ!তুমি কি তিনতলায় থাকো।" মধু প্রশ্নটা করেছে এইজন্য যাতে শিউর হতে পারে মেয়েটা ওই ছেলেটার বোন।
"হ্যাঁ আমরা তিনতলায় নতুন আসছি।আসার পর শুনলাম আমার বয়সই আরেকজন আছে তাই দেখা করতে এলাম।"
এরপর মধু আরকিছু বলল না।মধুর মা বলল"তুমি বসো।তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।"
"আরে না আন্টি।আমি নাস্তা করে এসেছি।"
"আরে বসো।নাস্তা করেছো তো কি হয়েছে।আবার করবে।"
আইরিন রহমান কিচেনে চলে গেলো।আইরিন রহমান যেতেই মধু বলল"তোমরা কয় ভাইবোন?"
"তিনভাই বোন।দুইটা বড় ভাই আছে আর আমি ওদের একমাত্র বোন।"
"ও..."
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর আইরিন রহমান আসলেন চা নাস্তা নিয়ে অগত্যা ইরিনের খেতেই হলো।তারপর তিনজনে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ইরিন চলে গেলো।
--------------------
দুপুরের খাবার মধু খায় নি জানালা দিয়ে বিরিয়ানি পাবার আশায়।কিন্তু নাহ!তিনটে বেজে গেছে বিরিয়ানি নাম গন্ধও নেই।এদিকে মধুর পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।একবার ভাবছে খেয়ে নেবে আবার ভাবছে খাওয়ার পর যদি বিরিয়ানি আসে!এই চিন্তায় মধু কি করবে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ ভেবে খেতে চলে গেলো।আর যাইহোক না খেয়ে থাকা অসম্ভব।মধু খাওয়া শেষ করে এসেই দেখে বিরিয়ানির বাটি জানালায় ঝুলছে।এই অবস্থায় মধুর প্রচুর কান্না পাচ্ছে।এতো লোভনীয় বিরিয়ানি অথচ পেটে এক ফোটা জায়গাও নেই।এখন কি করবে!ফ্রিজে রাখলে মা জিগ্যেস করবে এগুলো কোথা থেকে এসেছে!তখন আরো জ্বালা।না গিলতে পারছে না ফেলতে পারছে।মধু অতি দুঃখে বিরিয়ানির বাটি টা নিলো।তারপর ওটা খাটের নিচে রেখে দিলো।আর চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুললো।চিরকুটে লিখা ছিলো।
"ইয়াদ"
তুমি এতো পাষাণ কেনো?আমার ফোন ধরো না।মেসেজের রিপ্লাই দাও না।কেনো এমন করছো?উত্তর দাও।"
তোমার 'নিশি'
মধু মনেমনে বলল"ভালো কিছু একটা লিখতে হবে।উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে আর কিছু পাঠাবে না।তাই মধু লিখলো
"নিশি"
বাবু শোনো।আমি অনেক ব্যাস্ত।সামনপ পরীক্ষা বোঝোইতো!তুমি এমন রাগ করলে হবে?আচ্ছা পরীক্ষা শেষ হলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।"
তোমার"ইয়াদ"
এটা বলে ঝুড়িতে চিরকুট টা রেখে রশিতে ঝুলিয়ে দিলো।কিন্তু মধু এটা ভেবে পাচ্ছে না এই বিরিয়ানিগুলে কি করবে।হঠাৎ কে যেনো ওর রুমের দরজায় নক করলেন।মধু দ্রুত বিরিয়ানির প্লেট টা খাটের নিচে রেখে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দেখে আরিয়া দাড়িয়ে আছে।আরিয়াকে দেখে মধু বলল"কি রে।কি হইছে তোর।দু'দিন ধরে কলেজে আসিস না কেন?"
"ভেতরে চল।সব বলতেছি।"
(ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট দিয়ে মেসেজ না দিলে জুলে থাকবেন তাই রিকয়েস্ট দিয়ে মেসেজ দিবেন)
মধু আরিয়াকে ভেতরে নিয়ে এলো।আরিয়া ওর খাটের ওপর বসে বলল"জানিস,আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে গেছিলো।ওনাকে নিয়াই দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কলেজে আসতে পারি নাই।"
"তো ফোন দিলি না কেন?"
"আরে মনে ছিলো না।"
"ও আচ্ছা।এখন কি তুই টায়ার্ড?বিরিয়ানি খাবি?"
"হুম খাবো।তুই রান্না করছিস?"
"ধূর,আমি রান্না করতে পারলে তো!"
"তাহলে আন্টি রান্না করছে?"
মধু জবাব দেওয়ার আগে দরজাটা সাবধানে আটকে দিলো।তারপর বলল"আরে না।এটা জাদু।"
"তোর মাথা!সত্যি করে বলতো তো কাহিনি কি?"
এবার মধু নিশির কথা সব বললো কিন্তু সেদিন রাস্তায় কি হয়েছিলো সেট বললো না।সব শুনে আরিয়া হাসতে হাসতে শেষ।পেটে হাত রেখেই বলল"দোস্ত এমন কোনো বাড়ি পেলে বলিস তো! আমারও কারো বয়ফ্রেন্ড সেজে খেতে ইচ্ছে করছে।"
"আপাতত এই বিরিয়ানি খা।" মধু হাসতে হাসতে বলল।
-------------------
আরিয়া সন্ধ্যার সময় চলে গেছে।ওর ভাই এসে নিয়ে গেছে।আরিয়া যাওয়ার পর মধু মায়ের৷ বকুনিতে পড়তে বসলো।কিন্তু মধুর কপাল মনে হয় ভালো ছিলো বেশিক্ষণ পড়তে হয় নি কারেন্ট চলে গেছে।জেনারেটরের চার্জ
No comments:
Post a Comment