চুপি চুপি ভালোবাসি।
পর্বঃ০২
অনেক টানাটানি করেও মধু পায়েসের বাটিটা ওপরে তুলতে পারলো না।তারপর দড়িটা ছেড়ে আফসোসের স্বরে বলল"ইশ,আরেকটু তাড়াতাড়ি ধরলে পায়েসটা খেতে পারতাম।কি ইয়াম্মি ছিলো!থাক বেশি লোভ করা ভালো না।"মধু নিজেকে এসব স্বান্তনা দিয়ে পড়তে বসলো।
আধঘন্টা পড়ার পর মিলি এসে বলল"আপু,আম্মু তোকে ডাকছে।"
"কেনো?"
"আমি জানি না।তোকে যেতে বলছে।"
মধু টেবিল থেকে উঠে মায়ের কাছে গেলো।আইরিন রহমান খাটে বসে আছেন।মধু গিয়ে ওনার সামনে দাড়ালো।আইরিন রহমান বললেন"তোর নাকি আজকে অর্ধবার্ষিকীর রেজাল্ট দিয়েছে।মার্কশীট কই?"
মধুর পিলে চমকে উঠলো।একটা বড় ঢোক গিলে ঠোঁট কামড়াতে লাগলো।আইরিন বেগম ধমক দিয়ে বললেন"যা তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।"
মধু মায়ের রুম থেকে নিজের রুমে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো এখন কি করবে?যদি মা একবার মার্কশীট দেখে তাহলে 'মধু তু তো গেয়া'
মধু ভেবে কুল পাচ্ছে না কি করবে।ম্যাথ,পদার্থ,রসায়ন,জীববিজ্ঞান সবগুলোতে ফেল করেছে কিন্তু বাংলা তে টেনেটুনে পাশ উঠেছে।মধু নিজের রুম থেকে মার্কশীট টা এনে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের হাতে দিলো।আইরিম রহমান মার্কশীট দেখে পাঁচ মিনিট চুপ ছিলেন।তারপর বললেন"পিঠে বস্তা বেধে আয়।আজকে তোকে মেরে আমি বেত ভাঙবো।"
মধু ভয়ে কেঁদেই ফেলল।মধুর কান্না দেখে আইরিন রহমান আর বেত নিলেন না কিন্তু কড়া গলায় বললেন"এইগুলো কি করেছিস?দুইটা কোচিংএ পড়িস তবুও রেজাল্টের এই অবস্থা কেনো?সবগুলো সাবজেক্ট ফেল করেছিস।"
এবার মিলি আইরিন রহমানের কথায় বাম হাত ঢুকিয়ে বলল"আম্মু সব সাবজেক্টে না বাংলায় তো পাশ করেছে।"
মিলির কথায় আইরিন রহমান ঘর কাপিয়ে ধমক দিয়ে বলল"এগুলো পাশে ছিরি?ওমন পাশ না পড়েও করা যায়।বাংলা খাতায় ক,খ লিখলেই পাশ মার্ক তোলা যায়।"
আইরিন রহমান ইচ্ছামতো বকছে আর মধু মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনছে।একঘন্টার বয়ানের পর আইরিন রহমান বললেন"এখন ঘরে যা।আর মনে রাখিস ইন্টারে যদি খারাপ করিস তাহলে সোজা ধরে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।"
মধু মার্কশীট টা নিয়ে রুমে চলে এলো।তারপর আবার পড়তে বসলো।এবার যে করেই হোক ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।তা নাহলে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
------------------------
সূর্যের আলো বরাবর হয়ে মধুর চোখেমুখে লাগছে।মধু চোখমুখ কুঁচকে ফেললো তারপর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো।তারপর উঠে গিয়ে ব্রাশ মুখে দিয়ে কিচেনে গেলো।আইরিন রহমান মধুকে দেখে বলল"পরীক্ষায় ফেল করেও লজ্জা হয় না সাতটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকিস।"তারপর বিশটাকার নোট হাতে দিয়ে বলল"ডিম শেষ হয়ে গেছে।দুটো ডিম নিয়ে আয়।তাড়াতাড়ি যা মিলি স্কুলে যাবে।"
মধু ঘরে এসে ওড়না টা মাথায় দিয়ে ব্রাশটা মুখে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো।বাসার নিচে একটা মুদি দোকান আছে।কিছু লাগলেই ওইখান থেকে নেওয়া যায়।মধু দোকানের সামনে এসে বলল"আনোয়ার চাচা দুইটা ডিম দেন।"
দোকানদার মধুকে দুইটা ডিম দিলো আর মধু টাকা দিয়ে সামনে ঘুরতেই কালকে সন্ধ্যায় যে ছেলেটা ওকে বাঁচিয়েছিলো তাকে দেখতে পেলো।জগিং স্যুট পরা,কানে হেডফোন,কপাল দিয়ে দরদরিয়ে ঘান পরছে।ওহ!দেখতে কি কিউট লাগছে।মধু ভেবেছিলো গিয়ে কথা বলবে কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বলল'ছিঃএভাবে গেলে ছেলেটা তো তোর দিকে তাকাবেই না মধু।একদম ফকিন্নি লাগছে তোকে।থাক কথা বলার দরকার নেই কেটে পড়।"
ইয়াদ দূরে থাকা অবস্থায়ই মধু সুন্দর করে কেটে পড়লো।অথচ দূর থেকে ইয়াদ হাত নাড়িয়ে দাড়াতে বলল কিন্তু মধু সেটা দেখতে পেলো না এমম আচরণে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল"মেয়েটা আমাকে ইগনোর করলো কেনো?"নাকি অন্যকোনো কারণ!ইয়াদ অতো না ভেবে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।নাস্তা করে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
---------------------
মধু নাস্তা করে বেরিয়ে যেতে নিলেই ওর মা বলল"মধু,এই নে ক্ষীর আর পায়েসটা তিনতলায় নতুন ভাড়াটিয়াদের দিয়ে আয়।"
"কেনো?"
"নতুন কেউ আসলে দিতে হয়।তাছাড়া আমরা প্রতিবেশী।তাই ভালোমন্দ রান্না করলে দেওয়া উচিত।"
মধু মায়ের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।তিনতলায় এসে কলিং বেল চাপলো।একটু পর কেউ একজন দরজা খুললো।মধু সামনে তাকাতেই দেখলো তার ক্রাশ বয় দাড়িয়ে আছে।মধু উত্তেজনার চোটে কিছু বলতেও পারছে না।তবুও কষ্ট করে বলল"মা পাঠিয়েছে।"
ইয়াদ মধুর হাত থেকে বাটিটা নিতে গিয়ে ওর হাত মধুর হাতে টাচ লাগলে ইয়াদ দ্রুত সরিয়ে বাটিটা নিয়ে ঘরে দিয়ে আসলো।আর এদিকে মধু লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনী,হলুদ হতে লাগলো।আর ইয়াদ আসার আগেই চলে গেলো।কারণ আরো কতক্ষণ দাড়ালে বোধহয় মধু একবারে মাটিতে মিশেই যাবে।
ইয়াদ বাটিটা ফিরিয়ে দিতে আসলো কিন্তু দরজায় কেউ নেই।ওমা!গেলো কোথায়!ইয়াদ বাটিটা আবার ঘরে রেখে এসে নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
-------------------
আজও আরিয়া নেই।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।মধু কোচিং থেকে বেরিয়ে ভাবতে লাগলো কি করা যায়!আজও যদি কালকের মতো কিছু হয়!মধু হাটতে হাটতে ওই রাস্তাটায় পৌঁছে গেলো।কিন্তু আজ কোনো ছেলে নেই আশেপাশে।মধু আল্লাহর নাম নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।আর মনেমনে বলল আরিয়া যতোদিন না আসে ততদিনে সে কোচিং এ যাবে না।
মোটামুটি জোরে হাটার ফলে তাড়াতাড়ি চলে আসলো মধু আর আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যাও হয় নি!
বাসায় এসে প্রতিদিনের মতো ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো।কিন্তু পড়ায় মন বসছে না কালকের মতো আজও যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়!ইশ!সেইজন্য মধু জানালার কাছে এসে বসলো।এমনিতে বাসায় মা পায়েস,ক্ষীর রান্না করেছে কিন্তু এভাবে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।অপেক্ষা করতে করতে সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টা চলে এসেছে।মধু খেয়াল করলো একটা ঝুড়ি আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছে।মধু খপ করে ধরে ফেললো।তারপর ঝুড়িটা ঘরে নিয়ে এলো।আজকে পিঠা!তাও পুলি পিঠা!মধু জিহ্বা দিয়া ঠোঁট চেটে বলল"এখন থেকে এই খাবার আমার।"মধু চিরকুট টা নিয়ে খুললো চিরকুটে লিখা ছিলো
"ইয়াদ"
আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।তুমি আমার একটা ফোনও ধরো নাই।কিন্তু তবুও অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য বানাইছি।বইলো কেমন হইছে।"
তোমার"নিশি"
মধু চিরকুট টা পড়ে আরেকটা কাগজে লিখলো
"নিশি"
আ'ম সরি সোনা।আসলে অনেক বিজি ছিলাম তো তাই।রাগ করে না পাখি।আর পিঠাগুলো অনেক মজা হইছে।আরো কয়েকটা দিও।"
তোমার"ইয়াদ"
চিরকুটটা ভাজ করে পিঠাগুলো খেয়ে প্লেট আর চিরকুট ঝুড়িতে রেখে আবার দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে আসলো।
হঠাৎ মনে পড়লো বারান্দায় ছেলেটার জ্যাকেট টা শুকাতে দিয়েছিলো।সেটা আছে কি না!নাকি মা দেখে ফেলেছে।মধু দৌড় চলে গেলো বারান্দায়।গিয়ে দেখে জ্যাকেট টা ওখানেই আছে।মধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে ঘরে চলে আসলো।আর জ্যাকেট টা একটা শপিং ব্যাগে ভরে রাখলো।তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল"আম্মু,পায়েসের আর ক্ষীরের বাটিটা নিয়ে আসি?"
"কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসিস।এখন ওপরে গিয়ে নিশির মা'কে বল আমি ডাকছি।"
"আচ্ছা।"
এটা বলে মধু শপিং ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।নিশিদের বাসায় গিয়ে নিশির আম্মুকে ডেকে তারপর এই জ্যাকেট টা তিনতলায় গিয়ে ছেলেটাকে দিয়ে আসবে।মধু নিশিদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দরজা নক করলো।দরজা খুললো নিশি।নিশিকে দেখে মধু বলল"আপু,আন্টিকে একটু ডাকবে?আম্মু আন্টিকে ডাকছে।"
"আচ্ছা তুমি ঘরে আসো।"নিশির কথায় মধু ঘরে গেলো।নিশির মা নিচে গেলো আর মধুকে নিশি নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।টেবিলের ওপর তার লেখা দুটি চিরকুট পড়ে আছে।মধু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল" আপু,এগুলে কি?"
(এরকম গল্প পেতে রিকয়েস্ট দিয়ে ছোট একটি মেসেজ দিবেন )
নিশি চিরকুট টা গুলো লুকিয়ে বলল"আরে এগুলো আমার বান্ধবীর!"
"ও" মখে কিছু না বললেও মধু মনেমনে হাসলো।তারপর নিশির সাথে হালকা কথা বলে

No comments:
Post a Comment