চুপি চুপি ভালোবাসি।#পর্বঃ০৭
মধুর ভয় লাগছে।জিগ্যেস করবে বাগানে কেউ আছে কি না!নাকি জানালা বন্ধ করে দিবে।যদি চোর ডাকাত হয়!এমনিতেও বাসায় কেউ নেই।শুধু শুধু খাল কেটে কুমির আনার দরকার নেই।তাই মধু জানালা বন্ধ করে দিলো।
কালকে রাতের মতো আজকেও কাটবে ভয়ে ভয়ে এমনিতেই ঝড়বৃষ্টি তার ওপর মধুর আলগা ভয়তো আছেই।খাওয়া দাওয়া করে মধু দোয়া দুরুদ পড়ে শুয়ে পড়লো।
-----------------
আজও খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো মধুর কাল রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো।নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে গেলো।আজকে আর বের হতে ইচ্ছে করছে না।নাস্তা বানাতে বানাতে সাতটা বেজে গেছে।মধু নাস্তা খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো।হঠাৎ কলিং বেল বাজায় মধু নাস্তার প্লেট টেবিলের ওপর রেখে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো ওর মা আর বোন এসেছে।ওদের দেখে মধু দ্রুত টিভি বন্ধ করে নাস্তার প্লেট নিজের রুমে রেখে এসে দরজা খুল দিলো।আইরিন রহমান ঘরে ঢুকে বললেন"এতো সময় লাগলো কেনো দরজা খুলতে?"
"খাচ্ছিলাম আমি।"
"নাস্তা বানিয়েছিস?"
"হ্যাঁ।" মধু দায়সারা জবাব দিলো।
"কলেজে যাবি?"
"হুম।যেতে হবে।আমি রেডি হয়ে আসছি।" এটা বলে মধু নিজের ঘরে গিয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলো।তারপর ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘরে একবার উঁকি দিয়ে জিগ্যেস করলো"নানি কেমন আছে?"
"এখন ভালোই আছে।"
"আচ্ছা।"
বলেই মধু কলেজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়ে হাঁটতে লাগলো।একটু হাঁটতেই দেখলো ইয়াদ একটা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে কথা বলছে।মেয়েটাও হাসছে।কেনো জানি ব্যাপারটা একদম ভালো লাগছে না মধুর।কেনো ভালো লাগছে না মধু নিজেও জানে না।তাই মধু আর ওইদিকে তাকালো না কিন্তু তবুও চোখ হারামি বারবার ওইদিকে চলে যায়।ওদের ক্রস করার পর ঘাড়টাও বেইমানি করছে।না চাইতেও ঘাড় ঘুরিয়ে মধু ওদের দেখছে।ওরা চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত মধু কতোবার যে ঘাড় বাঁকা করে ওদের দিকে তাকিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না।কলেজে পৌঁছানোর পরই আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো মধু আরিয়া মধুর উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে বলল"কি রে কি হইছে?চেহারা এমন করে রাখছিস কেনো?"
"আরে একটা ছেলের ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছি।"
"তো সমস্যা কই!গিয়া লাইন মার।ছেলে কই থাকে?"
"আমাদের বাসার তিনতলায়!"
আরিয়া লাফিয়ে উঠে বলল"বাহ!তাইলে আর লাগে কি!সকালে বিকেল ক্রাশের সাথে দেখা হবে।তাই লাইন মারা শুরু কর।"
"এতো সহজ না বইন।পুরোটা শুনে তারপর কথা বল।ওর এক্স পাঁচ তলায় থাকে।"
মধুর কথা শোনার পর যতোটা উচ্ছ্বাস আরিয়ার মুখে ছিলো সব ফুস হয়ে গেছে।তবুও আরিয়া বলল"এক্স হইছে তো কি হইছে।ওর সাথে তো এখন সম্পর্ক নাই।"
"না থাকলেও ওর এক্স সহ্য করতে পারে না আমি ওর সাথে কথা বললে।"
"মানে কি?কি বলে?" আরিয়া ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।
মধু এই দুই তিনদিনে নিশি যা যা বলেছে,করেছে সব আরিয়া কে বলল।আরিয়া সব শুনে বলল"আচ্ছা বুঝলাম।আচ্ছা তোর ক্রাশ মানে ইয়াদের দিকে থেকে কোনো সাড়া আছে?"
"আমি বুঝতে পারছি না।স্বাভাবিক আচরণই করে।আর সবার সাথে যেভাবে কথা বলে আমার সাথেও সেভাবেই বলে।"
"এখনই কিছু বলা যাবে না।আরো কয়েকদিন দেখ।তারপর তুই নিজেই বুঝবি।"
মধু আরিয়ার কথার উত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্যার চলে এলো।তাই মধু আর কথা বলতে পারলো না।ক্লাস শেষে কোচিংএ গেলো।আজকে দুটো ব্যাচই পড়তে হবে।তিনচার দিন ধরে প্রচুর খামখেয়ালী করেছে আর করলে হবে না।
দুটো ব্যাচ ছুটি হয়েছে সন্ধ্যার সময়।আরিয়া আর মধু একসাথেই ওই রাস্তাটা দিয়ে হাটতে লাগলো।আচমকাই মনে হলো কেউ একজন ওদের পেছনে পেছনে আসছে!এটা শুধু মধুর না আরিয়ারও মনে হলো।কে আসবে!আরিয়া আর মধু দুজনই কয়েকবার পেছনে তাকালো কিন্তু না সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলো না।আবার হাঁটতে শুরু করলো ওরা এবারও সেম কাহিনী।মধু ভয়ে আরিয়ার হাত চেপে ধরে বলল"দোস্ত আমার মনে হয় ভূত আমাদের পিছনে পড়েছে।তাড়াতাড়ি হাট।"
"আরে ভূত-টুত কিছু না।হয়তো কেউ ফাইজলামি করতেছে।শালারে পাইলে চটকাইতাম।"
আরিয়া বিরক্তিমুখে হাটছে আর মধু ভয়ে ভয়ে।ওই রাস্তাটা পার হয়ে একটু হাটলেই মধুর বাড়ি।আরিয়া মধুর বাড়ির সামনে এসে ওকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।মধু ঘরের সামনে আসতেই দেখতে পেলো নতুন কয়েকজোড়া জুতা।মধু ভেবে পেলো না।ঘরে আবার কোন মেহমান আসলো।কৌতূহলী হয়ে দরজায় নক করলো সে।আইরিন রহমান দরজা খুলে হাসিমুখে মধুকে ঘরে নিয়ে এলো।আইরিন রহমানের আচরণ ঠিকঠাক লাগছে না মধুর কাছে।হঠাৎ এতো আদিক্ষ্যেতা কেনো!আইরিন রহমান যখন মধুকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো।তখন মধু বুঝতে পারলো কাহিনী কি!ওকে দেখতে এসেছে।একটা আন্টি টাইপের মহিলা আর একটা ছেলে।মনেহয় মহিলারই ছেলে।বয়স আন্দাজে ৩২ হবে হয়তো।মধুর অনুসন্ধানের মাঝে আইরিন রহমান বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন"এইতো আমার মেয়ে।ও রেডি হয়ে আসুক।আপনারা একটু বসুন।"
এটা বলে আইরিন রহমান মধুকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল"তাড়াতাড়ি বিছানার ওপর রাখা শাড়িটা পড়ে একটু সেজেগুজে নে।আর মুখ পেঁচা মতো না করে মুখে একটু হাসি রাখবি।"
এটা বলেই উনি চলে যেতে নিলেই মধু বলল"আমাকে একবার জিগ্যেস করতেও পারতে!"
"তোকে জিগ্যেস করার কি আছে।বড়ো হয়েছিস বিয়ে হবে না নাকি!কতোদিন আর আমার ঘাড়ে বসে থাকবি?"
"বললাম তো আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরো।আমি চলে যাবো।তোমার ঘাড়ে বসে খাবো না।তবুও এই বিয়েশাদিতে আমাকে জড়িয়ো না।"
"না,,কোনো কথা হবে।চটপট রেডি হয়ে আয়।আর ওদের সামনে উল্টাপাল্টা কিছু করলে একদম মেরে ফেলবো।"
বলে আইরিন রহমান চলে গেলেন।মধু বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে শাড়ি পড়লো।তারপর চুল ছেড়ে ওদের সামনে আসলো।আইরিন রহমান ওকে সবার সামনে বসিয়ে দিলেন।মধু মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে।ছেলের মা হঠাৎ বলে উঠলো"এইদিকে তাকাও।"
মধু মুখতুলে তাকালো।মহিলাটা পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল"পছন্দ হয়েছে বাবু?"
ছেলে বলল"তোমার পছন্দ হলেই হলো।"
ছেলের মা বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে বলল"মেয়ে মাশাল্লাহ!আমাদের পছন্দ হয়েছে।তো মামনি তুমি রাঁধতে পারো?"
"না আন্টি।"
মধু জবাব শুনে মধুর মা ওকে চোখ গরম করে ইশারায় বলল হ্যাঁ বলতে।কিন্তু মধু বলল না।মহিলাটা আবার বলল"শিখে নিবে।আর শোনো বিয়ের পর কিন্তু পড়ালেখা চলবে না।"
"কেনো?" মধু অবাক হয়ে বলল।
"কারণ আমার ছেলেই তো বিসিএস ক্যাডার।তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবে।তাই এতো পড়াশোনার দরকার নেই।"
মধুর মেজাজ তেতে উঠলো।মস্তিষ্কে সুপ্ত প্রতিবাদী ভাব জাগ্রত হলো।মুখের লাগাম খুলে গেলো।মধু উত্তপ্ত কন্ঠে বলল"আপনি মেয়ে তবুও এগুলো কিভাবে বলতে পারলেন?আমি কেনো আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়বো?কেনো আরেকজনের দাসত্ব করবো যেখানে আমিও মানুষ সেও মানুষ।নাকি আপনারা এখনো জাহিলিয়ার যুগে পড়ে আছেন।মেয়েদের মানুষ বলে মনে করেন না।মেয়েদের কি আত্মসম্মান বোধ নেই!আপনারা তো আমাদের বোঝা মনে করেন।কখন কার ঘাড় থেকে কে নামাবে।এই তো আমার মা তার ঘাড় থেকে নামানোর জন্য আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আর আপনি আপনার বিসিএস ক্যাডার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য লেগেছেন।ছিঃ"
এতুটুকু বলতেই আইরিন রহমান আর সহ্য করতে পারলেন না।মধুর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলেন।তারপর পাত্রপক্ষের সামনে এসে পাত্রের মাকে বললেন"ক্ষমা করবেন আপা।"
পাত্রের মা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল"এমন বেয়াদব মেয়ে এখনো বাচিয়ে রেখেছেন কেনো?এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে দিতে পারবেন না।"
এটা বলে মহিলা আর তার ছেলে চলে গেলো।রাগে আইরিন রহমানের মাথা ফেটে যাচ্ছে।কতো কষ্ট করে এমন একটা সমন্ধ জোগাড় করেছিলো!সব শেষ।
আইরিন রহমান মধুর ঘরে ঢ
No comments:
Post a Comment